অনলাইনে গরুর কেজি ৪৩০ টাকা, মাংসের দাম আসলে কত পড়ে
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমজুড়ে এখন চলছে গবাদিপশু বিক্রির বিজ্ঞাপন। গরুর ছবি দেওয়া, সঙ্গে ওজন উল্লেখ করা। ওপরের দিকে থাকছে মুঠোফোনে আর্থিক সেবার (এমএফএস) মাধ্যমে টাকা পরিশোধের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড়ের ‘অফার’ও।
কয়েক দিনে এমন অনেক বিজ্ঞাপন ঘেঁটে দেখা গেল, জীবন্ত অবস্থায় গরুর ওজন ধরে (লাইভ ওয়েট) কেজিপ্রতি দাম চাওয়া হচ্ছে ৪৩০ থেকে ৫০০ টাকা। বিপরীতে বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা।
তাহলে জীবন্ত অবস্থায় গরু ৪৩০ টাকা কেজি কিনলে মাংসের দর কত দাঁড়াচ্ছে?
জামালপুরের বরা মিয়া অ্যাগ্রোর উদ্যোক্তাদের একজন মো. মঞ্জুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে ক্রেতারা শুধু মাংস কেনেন। কিন্তু জীবন্ত অবস্থায় যে দাম ধরা হয়, তার মধ্যে গরুর চামড়া, ভুঁড়ি, মাথা, পা ইত্যাদির ওজনও যুক্ত হয়। সে হিসেবে ‘লাইভ ওয়েটে’ গরুর দাম যদি কেজিপ্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা হয়, তাহলে শুধু মাংসের দাম পড়বে কেজিপ্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা।
বরা মিয়া অ্যাগ্রো এবারও অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে গরু বিক্রি করছে। তারা গরুর জাত ও আকারভেদে দাম রাখছে কেজিপ্রতি ৪৩০ থেকে ৪৮০ টাকা। অবশ্য এর সঙ্গে যুক্ত পরিবহন খরচ। সেটা অবশ্য দূরত্বভেদে কমবেশি হয়।
দেশে করোনাকালে অনলাইনে গরু কেনাবেচা জনপ্রিয় হয়েছে। হাটে যাওয়া, আন্দাজের ওপর ভিত্তি করে গরু কেনা, দু-তিনজন লোককে শ্রমিক হিসেবে রেখে সেই গরু বাসায় নিয়ে আসা—এসব ঝক্কির বিপরীতে অনলাইনে গরু কেনাকেই ঝামেলামুক্ত মনে করেন কেউ কেউ। তাঁদের জন্য অনলাইন বিক্রেতারা নিয়ে এসেছেন নতুন ব্যবস্থা, সেটি হলো গরুর ওজন কত তা জানিয়ে দেওয়া এবং জীবন্ত অবস্থায় কেজি কত পড়বে তা উল্লেখ করা।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও মাংস ব্যবসায়ীরা বলছেন, একটি গরুর মোট ওজনের ৫৫ শতাংশের মতো মাংস ও হাড়। বাকি ৪৫ শতাংশ হবে কলিজা, চামড়া, ভুঁড়ি, রক্ত, মাথা ও পা ইত্যাদির ওজন।
বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ১০০ কেজি ওজনের একটি গরুর মাথার দামবাবদ ১ হাজার ২০০ টাকা, পা ৮০০ টাকা, ভুঁড়ি ১ হাজার টাকা, কলিজা ২ হাজার টাকা ও চামড়া ৭০০ টাকা ধরা যায়।
ধরা যাক, জীবন্ত অবস্থায় ৫০০ টাকা কেজি দরে আপনি ১০০ কেজি ওজনের একটি গরু কিনলেন। মোট দাম দাঁড়াল ৫০ হাজার টাকা। গরুটির কলিজা, পা, মাথা ও চামড়াবাবদ আপনি ধরতে
পারবেন ৬ হাজার টাকা। মাংস ও হাড় পাবেন ৫৫ কেজি।
যার দাম পড়বে ৪৪ হাজার টাকা (কলিজা, পা, মাথা ইত্যাদির দাম বাদ দিয়ে)। ফলে জীবন্ত অবস্থায় ৫০০ টাকা কেজিতে কেনা গরুর মাংসের দাম পড়ছে ৮০০ টাকার মতো।
‘লাইভ ওয়েট’ দিয়ে গরুর কেজিপ্রতি দাম ধরে বিজ্ঞাপন দেওয়ার কারণ হিসেবে পাবনার মৃত্তিকা ডেইরি ফার্মের একজন উদ্যোক্তা শাহিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার বিষয় থাকে। তবে এই দাম নির্ধারণ সম্পর্কে তাঁরা ক্রেতাকে পুরো হিসাবই বুঝিয়ে দেন।
গরুর ওজন মাপা হয় ডিজিটাল পাল্লায়, যা ডিজিটাল স্কেল নামে পরিচিত। দাম বেশি পড়লেও ‘লাইভ ওয়েট’ পদ্ধতিতে কেজির হিসাব যদি ক্রেতাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়, তাতে ক্রেতার ঠকার আশঙ্কা নেই বলে জানান প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জিনাত সুলতানা। গরুর ওজনের হিসাব করে বিক্রি করলে ক্রেতা জানবেন তিনি কত কেজি পর্যন্ত মাংস পাবেন। এ ছাড়া এই পদ্ধতিতে বিক্রি করলে স্বচ্ছতাও থাকে।