প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাতে আসবেই এমন কিছু বাংলা বানানের নিয়ম জেনে নিন ।কাজে আসবে


প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাতে আসবেই এমন কিছু বাংলা বানানের নিয়ম:


বিভিন্ন প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষাতে বাংলা বানানের শুদ্ধিকরণ এসে থাকে। বানানের সঠিক নিয়ম না জানার কারণে প্রায়শই দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়তে হয়। ফলে ভুল করে বসে এবং কাঙ্ক্ষিত নম্বর থেকে বঞ্চিত হয়। তাছাড়া বিভিন্ন আবেদন ও চিঠিপত্রে ভুল বানান দেখা যায় যা আমাদের জন্যে সুখকর নয়। কিন্তু এটি খুবই পরিতাপের বিষয় যে,জন্মের পর থেকেই যে ভাষা বলে আসছি তা সঠিকভাবে লিখতে পারি না। আবার চলার পথে বিভিন্ন সাইনবোর্ড, স্টেশন, প্রতিষ্ঠানের নামও অজ্ঞতাবশত বা নিয়ম না মেনে ভুল লেখা হয়।

বাংলা বানানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম:
১. তৎসম শব্দে “ট” বর্গীয় ধ্বনির আগে ” ন” স্থলে “ণ” হবে।যেমন- কণ্টক,লুণ্ঠন ইত্যাদি।তবে দন্ড,ঠান্ডা,লন্ঠন,ঝান্ডা,গুন্ডা,ডান্ডা,হোন্ডা শব্দগুলোতে “ন” হবে।কারণ এ গুলি অতৎসম শব্দ
২.বিদেশি ও অতৎসম শব্দে “ষ”ও”ণ” লেখা যাবে না।যেমন-স্টেশন,স্টুডিও,ফটোস্ট্যাট, মডার্ন,কর্নার,লন্ডন,কর্নেল,বার্ন,পোশাক,ইনস্টিটিউট,কর্নিয়া, মাস্টার,মিস্টার, পোস্ট,ডাস্টার,এ্যাডমিনিস্ট্রেট,পোস্টার,স্টার,গ্রীন,সেন্টার,সেমিস্টার, স্টোর,স্টেশনারি,স্টার, স্টাইল, স্ট্যান্ড,রেজিস্টার, এ্যাটর্নি,রেস্টুরেন্ট, এস্টেট, ফার্নিচার,ডায়াগনস্টিক, গ্যাস্ট্রিক, স্টাফ ইত্যাদি।

৩. দূরত্ব বোঝাতে “দূর ” অন্যথায় “দুর” লিখতে হবে।
৪.ক্রিয়াপদে সব সময় “ন” হবে “ণ”নয়।যেমন- করানো,ধরানো, করেন,মারেন,ধরুন ইত্যাদি।
৫.সমাসবদ্ধ শব্দে ণ-ত্ব বিধান ও ষ-ত্ব বিধান প্রযোজ্য নয়।যেমন-ত্রিনয়ন,অগ্রনায়ক, পরনিন্দা, দুর্নিবার ইত্যাদি।
৬.অপ্রাণী, ইতরপ্রাণী,দেশ,ভাষা ও জাতি বাচক শব্দের শেষে “ই” (ি) কার হবে।যেমন-

ক)অপ্রাণী :বাড়ি,গাড়ি,চাবি,শাড়ি ইত্যাদি
খ)ইতরপ্রাণী: পাখি,হাতি,মুরগি ইত্যাদি
গ)জাতি:বাঙ্গালি,ইংলিশ, পর্তুগিজ ইত্যাদি
ঘ)ভাষা:হিন্দি,আরবি,ফার্সি,জার্মানি ইত্যাদি
ঙ)দেশ: গ্রিস,ইতালি,ইত্যাদি
৭.অদ্ভুত ও ভুতুড়ে শব্দদুটি ছাড়া সব ভুতে (ূ)ঈ কার হবে।
৮.তৈরি ক্রিয়াপদ হিসেবে এবং তৈরী বিশেষ্যণ হিসেবে বাক্যে ব্যবহৃত হবে।যেমন-

ক)একগ্লাস সরবত তৈরি কর।(ক্রিয়াপদ)
খ)রহিম তৈরী প্যান্ট পরে।(বিশেষণ)
৯. আগামী ও গত শব্দের পরের শব্দ সর্বদা আলাদা বসবে।যেমন-আগামী কাল,গত কাল,গত পরশু ইত্যাদি
১০.অন্তঃস্থ মানে ভেতরে বা অন্তরে স্থিত, আর অন্তস্থ মানে অন্তে বা শেষে স্থিত হিসেবে লিখতে হবে।
১১. পুকুরের পাড় কিন্তু নদী বা সাগরের পার লিখতে হবে।যেমন-

ক.পুকরপাড়ের বট গাছটি অনেক প্রাচীন।
খ. সাগর বা নদী পারের দৃশ্য মনোরম।
১২. ভারি অর্থ – বেশি/খুব।যেমন-
ক.মেয়েটি ভারি সুন্দর।
ভারী অর্থ ওজন।যেমন –
খ.পাথর অনেক ভারী।১৩. ইংরেজিতে Wh দিয়ে প্রশ্ন করলে যে প্রশ্নবোধক চিহ্ন বসে তাহলো “কী”।আর কী দিয়ে প্রশ্ন করলে মাথা নাড়িয়ে বা “হ্যা” অথবা “না” দিয়ে উত্তর করা যায় না।অর্থাৎ উত্তর করতে মুখ খুলতেই হয় ।যেমন- তুমি কী ভাত খাও? অর্থাৎ জানতে চাওয়া হচ্ছে তুমি কোন প্রকারে ভাত খাও। খিচুড়ি, পোলাও,বিরানি ইত্যাদি। অপরপক্ষে Be verb দিয়ে প্রশ্ন করলে তা “কি” লিখা হয়। যেমন-তুমি কি ভাত খাও। জানতে চাওয়া হচ্ছে তুমি ভাত খাও কি-না। উত্তর হবে হ্যাঁ অথবা না। এখানে “কী” সর্বনাম /বিশেষণ। আর ” কি” অব্যয় পদ।

১৪.”ও”শব্দ সংযোজক। যথা-
ক.আসমা ও রিতা দুই বোন।
খ. “এবং” বাক্য সংযোজক। যথা- করিম বাজারে যাবে এবং জামা কিনবে।
১৫. বিস্ময়সূচক অব্যয় ছাড়া অন্যকোন শব্দের শেষে বিসর্গ(ঃ) লেখা যাবে না।যেমন- বাহঃ,ছিঃ, উঃ,আহঃ ইত্যাদি কিন্তু বিশেষত,কার্যত,প্রথমত ইত্যাদি শব্দের পরে বিসর্গ (ঃ) লেখা যাবে না।

১৬. কোন শব্দের শেষে যদি “ঈ”(ী)কার থাকে এবং সেই সাথে সভা,জগৎ,বাচক,বিদ্যা,তা,ত্ব,নী,ণী,তত্ত্ব,পরিষদ ইত্যাদি যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠিত হয় তবে পূর্বের “ঈ” কার “ই” কার হবে।যেমন-
ক) প্রাণী+ বাচক /জগৎ/বিদ্যা হবে যথাক্রমে প্রাণিবাচক/ প্রাণিজগৎ / প্রাণিবিদ্যা ইত্যাদি
খ) মন্ত্রী+ সভা/পরিষদ হবে মন্ত্রিসভা,মন্ত্রিপরিষদ,মন্ত্রিত্ব ইত্যাদি
গ) কৃতী+ত্ব/সুলভ/পূর্ণ= কৃতিত্ব, কৃতিসুলভ, কৃতিত্বপূর্ণ ইত্যাদি

ঘ) স্থায়ী /দায়ী+ত্ব= স্থায়িত্ব, স্থায়িত্বকাল, দায়িত্ব, দায়িত্ববান ইত্যাদি
১৭. উত্তর, পর,পার,চান্দ্র,নার,রাম শব্দের পরে “অয়ন ” শব্দ আসলে “ন” এর স্থলে “ণ” হবে।যেমন-
উত্তর+ অয়ন =উত্তরায়ণ,
পর+অয়ন= পরায়ণ,
রাম+অয়ন= রামায়ণ
নারায়ণ, চান্দ্রায়ণ, ইত্যাদি
১৮.সন্ধিতে নিঃ উপসর্গের পর ‘ক’ ‘খ’ ‘প’ ‘ফ’ এর যেকোন একটি থাকলে বিসর্গের জায়গায় “ষ” হয়।যেমন- নিঃ+পাপ= নিষ্পাপ,
নিঃ+ফল= নিষ্ফল,

নিঃ+ কলঙ্ক =নিষ্কলঙ্ক ইত্যাদি।
কিন্তু নিঃ এর পরে শ,স,ষ থাকলে বিসর্গ বহাল থাকে।যেমন-
নিঃ+ শঙ্ক= নিঃশঙ্ক,
নিঃ+শব্দ= নিঃশব্দ,
নিঃশোক, নিঃসাড় ইত্যাদি
১৯. “স্ত” “স্থ” এর মধ্যে পার্থক্য হলো- শব্দকে বিশ্লেষণ করলে যদি মূল শব্দ অক্ষত বা অবিকৃত থাকে তবে তার সাথে “স্থ” হবে।যেমন-
পকেট+স্থ=পকেটস্থ
মুখ+স্থ=মুখস্থ ইত্যাদি।

অপরপক্ষে শব্দ অক্ষত না থাকলে “স্ত” হবে।যেমন-অভ্যস্ত,অস্ত,গ্রস্ত,ন্যস্ত,বিধ্বস্ত ইত্যাদি।
২০. ঙ(ং), ঞ,ণ,ন,ম এর কারণে (ঁ) হয়।যেমন-
চাঁড়াল<চন্ডাল,সাঁঝ<সন্ধ্যা,ফাঁদ<ফন্দি,
দাঁত<দন্ত,তাঁবু<তাম্বু,আঁচল<অঞ্চল,
আঁখি<অক্ষি,আঁধার<আন্ধার /অন্ধকার,
আঁজলা<অঞ্জলি,কাঁথা<কন্থা,কাঁধ<কন্দ,
কাঁটা<কণ্টক, কাঁপন< কম্পন,চাঁপা<চম্পক,

হাঁস< হংস ঝাঁপ<ঝম্প,পাঁক<পঙ্ক,পাঁচ<পঞ্চ,
বোঁটা<বৃন্ত,বাঁশ<বংশ,পাঁচ<পঞ্চ,বাঁশি<বংশী,
ভাঁড়<ভণ্ড,পাঁজি<পঞ্জি,পাঁজর<পঞ্জর,
আঁশ<অংশু,ষাঁড়<ষণ্ড,দাঁড়<দণ্ড ইত্যাদি
২১.সন্ধিতে ‘ ম’ এর পর যেকোন বর্গীয় ধ্বনি (ক-ম) থাকলে ‘ম’ ধ্বনিটি সেই বর্গের নাসিক্য ধ্বনি হয়।যেমন-
শম+ কা=শঙ্কা

সম+চয়=সঞ্চয়
সম+তাপ=সন্তাপ ইত্যাদি
২২. সন্ধিতে “ম” এর পর অন্তঃস্থ ধ্বনি, য,র,ল,ব কিংবা শ,ষ,স,হ থাকলে “ম” স্থলে অনুস্বর (ং) লিখতে হবে।যেমন-
সম+যম=সংযম
সম+লাপ=সংলাপ
সম+বাদ=সংবাদ
সংরক্ষক, সংরক্ষণ,সংশয়, সংসার, সংহার ইত্যাদি


Post a Comment

Previous Post Next Post