ব্যাপক জনবিক্ষোভের মুখে মঙ্গলবার দেশ ছেড়ে মালদ্বীপে পালিয়ে যান শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। তাঁকে আশ্রয় দেওয়ায় মালদ্বীপের রাজনৈতিক দলগুলো দেশটির সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছে। অন্যদিকে দেশটির সাধারণ লোকজনও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, মালদ্বীপের প্রধান বিরোধী দল প্রগ্রেসিভ পার্টি অব মালদ্বীপ (পিপিএম) গোতাবায়া রাজাপক্ষকে আশ্রয় দেওয়ার বিরোধিতা করেছে। দলটির একজন নেতা বলেছেন, ‘নিজ দেশে ঘৃণিত নেতা রাজাপক্ষেকে আশ্রয় দিয়ে আমরা শ্রীলঙ্কান বন্ধুদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছি।’
আরেক বিরোধী নেতা দুনায়া মাউমুন গোতাবায়াকে মালদ্বীপ নিরাপদে পালানোর পথ করে দেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দুনায়া সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট মাউমুন আবদুল মাওমুন আবদুল গাইয়ুমের মেয়ে। তিনি আল-জাজিরাকে বলেন, ‘এখানে গোতাবায়ার উপস্থিতিতে আমরা অবশ্যই উদ্বিগ্ন।’
রাজধানী মালে থেকে সাবেক প্রেসিডেন্ট মাউমুন আবদুল মাওমুন আবদুল গাইয়ুমের মেয়ে বলেন, ‘আমি মনে করি গোতাবায়ার নিজ কর্মের পরিণতি ভোগ করার জন্য শ্রীলঙ্কায় থাকা উচিত। আমি বলছি না যা হচ্ছে তার সবকিছুর জন্য তিনি দায়ী, কিন্তু অর্থনৈতিক এ সংকটে তাঁর বড় ভূমিকা রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে আরও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। আমি জানি, দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগে সবাই নির্দোষ। কিন্তু ন্যায়ের জয় হওয়া প্রয়োজন।’
মালদ্বীপ ন্যাশনাল পার্টির নারী উইংয়ের সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট হওয়া দুনায়া বলেন, অবশ্যই শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের মানুষ উদ্বিগ্ন। একজন মানুষ এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেন না, যাতে একটি দেশ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এরপর আবার বিচার এড়াতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
এদিকে রাজাপক্ষেকে আশ্রয় দেওয়ায় সরকারের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশটির সাধারণ লোকজন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন অনেকেই। তাঁরা বলছেন, শ্রীলঙ্কান প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু সেটি জানা সত্ত্বেও মালদ্বীপ সরকার তাঁকে আশ্রয় দিয়েছে।
আইমান লতিফ নামের একজন সরকারকে উদ্দেশ্য করে টুইটারে লিখেছেন, ‘তাঁকে (গোতাবায়া রাজাপক্ষেকে) আমাদের দেশে আশ্রয় দেওয়ার মতো সাহস কীভাবে হয়? রাজাপক্ষেকে দ্রুত শ্রীলঙ্কায় ফেরত পাঠিয়ে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানো হোক।’
অনেকে আবার রাজাপক্ষেকে আশ্রয় দেওয়ায় সরকারের প্রশংসা করেছেন। তাঁরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা চলার সময় বিচারের হাত থেকে বাঁচতে মালদ্বীপের অনেক রাজনীতিবিদ শ্রীলঙ্কায় পালিয়ে গিয়েছিলেন।এদিকে গোতাবায়া রাজাপক্ষে মালদ্বীপের অবস্থানকালে রাজধানী মালেতে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন সেখানে বসবাসরত শ্রীলঙ্কানরা। রাজাপক্ষেকে আশ্রয় দেওয়ায় মালদ্বীপ সরকারের সমালোচনা করেছেন তাঁরা।