ক্রেডিট কার্ডে বেশি ঋণ করছে মানুষ

 দেশে মানুষের মধ্যে ক্রেডিট কার্ডে ঋণ করা বেড়ে গেছে। এমন এক সময় ক্রেডিট কার্ডে ঋণ করা বেড়েছে, যখন বাজারে সব ধরনের পণ্যমূল্য বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। এ কারণে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের অনেকে ক্রেডিট কার্ডের ঋণে ঝুঁকছেন বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকেরা।



বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ৩৯ শতাংশ বেড়ে গেছে। ২০২১ সালের মে মাসে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা। চলতি বছরের মে মাসে এ লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেনের পরিমাণ ৩৮ দশমিক ৮২ শতাংশ বেড়ে গেছে। অথচ এ সময়ের ব্যবধানে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা বেড়েছে সাড়ে ১০ শতাংশের মতো।সাধারণত ক্রেডিট কার্ডে কেনাকাটার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিনা সুদে ঋণসুবিধা মেলে। এ ছাড়া ইলেকট্রনিক সামগ্রীসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য কেনার ক্ষেত্রে মেলে কিস্তিতে অর্থ পরিশোধের সুবিধা। আবার বিদেশ যাত্রায় বা দেশের ভেতরে ভ্রমণের ক্ষেত্রে নানা ধরনের ছাড়ও পাওয়া যায় ক্রেডিট কার্ডে লেনদেনের ক্ষেত্রে। এ কারণে মানুষ খরচের চাপ কমাতে বা নানা ধরনের ছাড়ের সুবিধা নিতে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, করোনার কারণে গত কয়েক বছরে মানুষের মধ্যে অনলাইন লেনদেনের আগ্রহ বেড়েছে। আবার করোনা–পরবর্তী সময়ে সব ধরনের পণ্যমূল্য বেড়ে গেছে। মূল্যস্ফীতিজনিত কারণে একই পণ্য কিনতে আগের চেয়ে বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। ক্রেডিট কার্ডে লেনদেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার এটিও একটি কারণ। এ ছাড়া ক্রেডিট কার্ডে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের সুবিধা থাকে। পাশাপাশি কিস্তিতে পণ্য কেনাসহ নানা ধরনের ছাড়ের সুবিধাও থাকে। এসব কারণে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বাড়ছে।

তবে গত ৯ জুন ঘোষিত বাজেটে ক্রেডিট কার্ড গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অর্থাৎ এখন থেকে ক্রেডিট কার্ড নিতে শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন থাকলেই চলবে না, রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্রও জমা দিতে হবে। এর ফলে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যাংকাররা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের লেনদেন–সংক্রান্ত তথ্যে জুনের হিসাবটি এখনো যুক্ত হয়নি। তাই সর্বশেষ মাসটিতে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেনের পরিমাণ বাড়ল নাকি কমল, তা এখনই জানা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংক যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, মে মাস শেষে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৪১ হাজার ১৬২। এপ্রিলে এ সংখ্যা ছিল ১৯ লাখ ২২ হাজার ২৭৩। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১৯ হাজার।

গত বছরের মে মাসের তুলনায় এ বছরের মে মাসে এসে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেনের পরিমাণ ৩৯ শতাংশ বাড়লেও এ সময়ে ডেবিট কার্ডে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে মাত্র ১৬ শতাংশ। গত বছরের মে মাসে ডেবিট কার্ডে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। সর্বশেষ গত মে মাসে তা বেড়ে হয়েছে ২৬ হাজার ৫১ কোটি টাকা। তাতে দেখা যাচ্ছে, শতাংশের বিচারে ডেবিট কার্ডের তুলনায় ক্রেডিট কার্ডে লেনদেনের প্রবৃদ্ধি দ্বিগুণের বেশি।বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের নেটওয়ার্ক সরবরাহকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান মাস্টারকার্ডের এ দেশীয় ব্যবস্থাপক বা কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, মানুষের মধ্যে দিন দিন ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বাড়ছে। কারণ, ক্রেডিট কার্ডে কেনাকাটায় কিস্তি সুবিধা যেমন আছে, তেমনি মেলে নানা ধরনের ছাড়। এ ছাড়া ক্রেডিট কার্ড লেনদেন বৃদ্ধির আরেকটি বড় কারণ নির্দিষ্ট একটি সময় পর্যন্ত বিনা সুদে ঋণসুবিধা পাওয়া যায়।

Post a Comment

Previous Post Next Post