ভেড়ামারা উপজেলায় ময়নাতদন্তের জন্য ভ্যান চালিয়ে মেয়ের লাশ প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরের থানায় পৌঁছে দিয়েছেন । তাঁর অভিযোগ, জামাতাকে ফোন কিনে না দেওয়ায় তাঁর মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। অন্যদিকে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দাবি, অভিমানে গলায় ফাঁস দিয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেছে তাঁর মেয়ে।
গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশের নির্দেশে লাশ থানায় পৌঁছে দেন ওই গৃহবধূর বাবা। আজ মঙ্গলবার দুপুরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এ ঘটনায়আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে জামাতা, মেয়ের শ্বশুর ও শাশুড়িকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন বাবা।নিহত ওই গৃহবধূর নাম হোসনা খাতুন (১৬)। সে উপজেলার ইউনিয়নের গ্রামের ভ্যানচালকের মেয়ে। সাত মাস আগে পাশের বীরকুৎসা গ্রামের জাহিদুল ইসলামের ছেলে রানা ইসলামের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিয়ের পর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। গতকাল সন্ধ্যায় শ্বশুরবাড়ি থেকে ওই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তখন পারিবারিক অশান্তির কারণে হোসনেয়ারা গলায় ফাঁস দিয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেছে বলে ইসলামের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। অন্যদিকে গৃহবধূর বাবা অভিযোগ করেন, তাঁর মেয়েকে পিটিয়ে হত্যার পর এলাকায় আত্মহত্যার খবর প্রচার করা হয়েছে। এ নিয়ে জটিলতা তৈরি হলে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করতে সময় লেগে যায় পুলিশের।পুলিশ জানায়, ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠাতে লাশ থানায় নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। তখন নিজে ভ্যান চালিয়ে মেয়ের লাশ রাত সাড়ে ১১টার দিকে থানায় পৌঁছে দেন বাবা আবদুল মালেক। আজ সকালে জেলা পুলিশের লাশবহনকারী গাড়িতে লাশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। দুপুরে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
হোসনার বাবা আবদুল মালেক অভিযোগ করে বলেন, ঈদের আগে তাঁর জামাতা একটি স্মার্টফোন চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটি দিতে না পারায় জামাতা ও তাঁর পরিবারের লোকজন ক্ষেপে যান। এ নিয়ে বিরোধের জেরে তাঁর মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পরে আত্মহত্যার খবর প্রচার করা হয়। মেয়ের লাশ ঘরের বারান্দায় ফেলে জামাতা ও তাঁর মা–বাবা পালিয়ে যান বলেও জানান তিনি।অল্প বয়সে মেয়েকে বিয়ের দেওয়ার ব্যাপারে আবদুল মালেক বলেন, একে অপরকে পছন্দ করে বিয়ে করেছে। তাঁর উপলব্ধি, অল্প বয়সে মেয়ের বিয়ে দেওয়া উচিত হয়নি।
বাগমারা থানার পরিদর্শক তৌহিদুর রহমান বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে থানায় একটি নিয়মিত মামলা হয়েছে। মামলায় ওই গৃহবধূর স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে আসামি করা হয়। তিনি আরও বলেন, ওই গৃহবধূর বাবার ভ্যানে রাতে থানায় লাশ আনা হয়েছে। বাহন না পাওয়ায় তাঁর ভ্যানেই থানায় নেওয়া হয়।
ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাজেদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাবার ভ্যানে মেয়ের লাশ বহন করা বড়ই কষ্টদায়ক। অন্য গাড়িতে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, না পাওয়ায় তাঁর ভ্যানেই থানায় নেওয়া হয়।